হাওরাঞ্চলের চারটি জেলার সীমান্তবর্তী বাজার শাল্লার সাতপাড়া। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলটিতে যোগাযোগের নেই কোনো ব্যবস্থা। “হেমন্তে পাও আর বর্ষায় নাও” হাওরাঞ্চলে লোকমুখে প্রচলিত বাক্য। বর্ষায় নিচু এলাকায় যাতায়াতের মূল বাহন নৌকা। আর হেমন্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা হেটে পাড়ি দিতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের। দুঃখ দুদর্শার কথা চিন্তা করেই এলাকাবাসী ১৯ বছর আগে সাতটি গ্রামের মানুষ মিলিত হয়ে সাতপাড়া বাজার গঠন করেন। এই বাজারের আশপাশে আট কিলোমিটারের মধ্যে কোনো পুলিশ স্টেশন নেই। তাই ডাকাতের ভয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের সীমানায় থাকা প্রত্যন্ত নাজিরপুর, আদিত্যপুর, বলরামপুর, কার্তিকপুর, হেনানীপুর, কেওরালা ও ঘোয়ানি, গ্রামবাসী হাটবাজার করতে এক সময় আট কিলোমিটার দূরের আজমিরিগঞ্জ কিংবা ১০-১২ কিলোমিটার দূরের শাল্লার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী বা কিশোরগঞ্জের ইটনায় যেতেন। ২০০৩ সালে প্রত্যন্ত হাওর এলাকার সাত গ্রামের মানুষ সাতপাড়ায় বাজার করার উদ্যোগ নেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গণি ও চাঁন মিয়া, দিগেন্দ্র সরকার (মাস্টার), রমেন্দ্র নারায়ণ সরকার প্রমুখের উদ্যোগে শাল্লার শেষ সীমানা সাতপাড়ায় বাজার গড়ে ওঠে। এখন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, কিশোরগঞ্জের ইটনা, সুনামগঞ্জের শাল্লা এবং আজমিরিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার ৩০টির মতো গ্রামের মানুষের বাজার এটি। এরই মধ্যে দেড়শর মতো দোকান গড়ে উঠেছে ওখানে। বাজার গড়ে ওঠার পর থেকেই এখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাজারের ব্যবসায়ী ডা. প্রভাত সরকার জানান, ছায়ার হাওরের পশ্চিম পাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার বাজার এখন জমে উঠেছে। তবে ব্যবসায়ীরা সবসময়ই ডাকাত আতঙ্কে থাকেন। হাওরপাড়ের এই বাজার থেকে শাল্লা, আজিমিরিগঞ্জ, ইটনা ও খালিয়াজুরীর দূরত্ব ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার। বাজারে কোনো সমস্যা হলে সকালে খবর দিলে পুলিশ পৌঁছাতে বিকেল হয়। এ অবস্থায় বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি হলে বাজারটি আরও জমে উঠবে।
বাজারের উদ্যোক্তা শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস গণি বলেন, ‘ভাটির চেয়ে ভাটিতে থাকা মানুষের হাটবাজার কিংবা অসুখ-বিসুখ হলে যাতে বাজারে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন, সেই চিন্তা থেকে এখানে বাজার গড়ে তুলেছিলাম। শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, চার জেলার সীমান্তে গড়ে ওঠা এই বাজার জমাতে হলে পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন আছে, আমরা বারবার দাবিও জানাচ্ছি, কিন্তু কেউ শুনছেন না আমাদের কথা।’ বাজার কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, সারাবছরই বাজারের ব্যবসায়ীরা ডাকাত আতঙ্কে থাকেন। পাঁচ বছর আগে একবার ডাকাতি হয়েছে, বাজারে পাহারাদার থাকার পরও একটু সুযোগ পেলেই চুরি হয়। কয়েকদিন আগে ঝড়-তুফান ছিল, পাহারাদার রেখেই ঝড়ের সময় একটি স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বাজারে পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর দাবি করেছি আমরা। ফাঁড়ির জন্য জমিও দিতে প্রস্তুত বাজার কমিটি; কিন্তু কেউ আমলে নিচ্ছেন না বিষয়টি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, পুলিশ ফাঁড়ির বিষয়ে তিনি সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন শাল্লা থানা থেকে আরেকটি ফাঁড়িতে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। তবুও সেখানে কীভাবে একটি ফাঁড়ি করা যায়, তা ভেবে দেখা হবে।