সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):
দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় হাপিয়ে ওঠেছিলো শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলার পর যে একটু ক্রীড়া বিনোদন উপভোগ করবে সেই অবস্থা নেই দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া-বিনোদনের মাধ্যম একমাত্র খেলার মাঠটিতে এখন কাটা পাথরের কনা, রড আর বালু ভর্তি। যেনো বিল্ডিং নির্মানের কারখানা।
দীর্ঘদিন দরে স্কুলের নিকটবর্তী ব্রিজ নির্মানের কাজ চলায় সব ধরনের যানাবাহন চলাচল করতো স্কুলের মাঠের ভিতর দিয়ে। যানবাহন চলাচল করায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে মাঠের চারদিকে। একপাশ ভেঙ্গে নদীতে পরিনত হওয়ার মতো।
নরসিংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংপুরসহ আশপাশের ৩-৪টি গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র ভরসা নরসিংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৬’শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৫ জন শিক্ষক রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, পরীক্ষার ফলাফল অর্জনের দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজোবধি সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে নরসিংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছে। অনেকে আবার শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় দায়িত্ব পেয়েছে নিজেদের পাঠদান করা এই বিদ্যালয়ে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থিত একমাত্র মাঠে খেলাধুলা করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্রীড়া বিনোদন থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি ভোগান্তি চরমে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আরিফ আহমেদ বলেন, ‘মাঠে পাথরের কনা আর কাটা রড থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারিনা। স্কুলে আসার পর এবং স্কুল ছুটির পর বসে বসে সময় কাটাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ফখর উদ্দিন বলেন, ‘খেলার মাঠে কাটা পাথর, রড আর বালি। স্কুল খুলার পর থেকে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করাতো দূরের কথা হেটে চলাচল পর্যন্ত করতে পারছেনা। খেলাধুলা করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে ভেগাত ঘটবে। মাঠ থেকে ব্রিজ নির্মানের সামগ্রী সরিয়ে মাঠটি ভরাট করে খেলাধুলার উপযোগী করা জরুরী।’
আওয়ামীলীগ নেতা ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মনোয়ার আলী মনর বলেন, স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে মাঠে ব্রিজ নির্মানের রড, পাথর, বালিসহ যাবতীয় মালামাল রাখা হচ্ছে। এমনকি গাড়ি চলাচলের রাস্তা ও করে দেওয়া হয় স্কুলের মাঠের ভিতর দিয়ে। মাঠ দিয়ে যানাবাহন চলাচল করায় মাঠে তৈরি হয়েছে শতাধিক গর্ত এবং কাটা পাথর আর রডের কারনে নষ্ট হয়ে পড়েছে মাঠ। কয়েকদিন আগে স্কুলে উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) আসলে বিষয়টি অবগত করানো হলে মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঠে মাঠি ভরাট করে দিবে বলে আসস্ত করে। কিন্তু এখনুবৃদি কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। মাঠ থাকা স্বত্ত্বেও মাঠে পাথরে ভর্তি থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে না পারায় অনেকে আবার না আসার বায়না দরেছে। দ্রুত মাঠ থেকে এসব সামগ্রী সরিয়ে মাঠে মাটি ভরাটের দাবি জানাই।
নরসিংপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘ স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে কাটা পাথর, বালি আর রডসহ ব্রিজ নির্মানের সামগ্রী দিয়ে ভরাট করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার ফলে মাঠ দিয়ে যানাবাহন চলাচল করায় মাঠে তৈরি হয়েছে গর্ত। একদিকে গর্ত আরেকদিকে পাথরের কনা যার ফলে বিনষ্ট হচ্ছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। মাঠ খেলাধুলা করবে দূরের কথা শিক্ষার্থীরা এখন মাঠ দিয়ে হাঠতে ও ভয়পায়। মাঠ ভরাট করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক ফান্ড আমাদের নেই। বিদ্যালয়ের এই একমাত্র খেলার মাঠটি ভরাটের জন্য আমরা দাবি জানাই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চনন কুমার সানা বলেন, গত মাসে স্কুলের একটি সভায় ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে মাটি ভরাটের জন্য বলা হয়। কিন্তু এখনুবৃদি কোন সুরাহা পায়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মিলন বাবু বলেন, স্কুল বন্ধ থাকা কালিন কাটা পাথর, রড ও বিভিন্ন সামগ্রী সেখানে ছিলো সত্য। প্রতিষ্ঠান খুলার আগে আমাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাঠে এখন আমার কিছু নেই।
তাছাড়া ইউএনও স্যার ও উপজেলা শিক্ষাঅফিসারের উপস্থিতিতে স্কুলের মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ১০, হাজার টাকা দেব ওয়াদাবদ্ধ হয়েছি। স্কুল পরিচালনা কমিটি যখন প্রয়োজন মনে করবে আমি দিয়ে দেবো।